জমির রেকর্ড যাচাই, আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক-পাঠিকা। কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে জমির খতিয়ান চেক করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তাদেরকে আজকে শিখিয়ে দিব কিভাবে অনলাইনে ঘরে বসেই আপনি আপনার জমির খতিয়ান রেকর্ড বের করতে পারবেন। তো চলুন বেশি কথা না বাড়িয়ে আজকের পোষ্টে চলে যাওয়া যাক।
অনেক সময় আমাদের জমির খতিয়ান হারিয়ে যায়। এই জন্য ভূমি অফিসে দিনরাত ঘোরাঘুরি করে খতিয়ান বের করতে হয়। কিন্তু আপনি চাইলে খুব সহজে ঘরে বসেই আপনার জমির খতিয়ান বের করতে পারবেন।
এর পাশাপাশি আপনি যখন জমি বিক্রি করতে যাবেন সেক্ষেত্রে আপনার জমির খতিয়ান নাম্বার এবং মালিকানা সম্পর্কে জানা ছাড়া সেই জমি বিক্রি করতে পারবেন না। তাই আপনার অবশ্যই আপনার জমির খতিয়ান জানা প্রয়োজন।
জমির খতিয়ান নাম্বার না দেখে জমি কিনলে অনেক বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে ভবিষ্যতে। সে কারণে অবশ্যই আপনি জমি কেনার আগে জমির খতিয়ান নাম্বার চেক করে নিবেন। যদি কাগজ পাতি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে ঘরে বসেই যার থেকে জমি কিনবেন অথবা যার কাছে জমি বিক্রি করবেন উভয় পক্ষই অনলাইনের মাধ্যমে জমির খতিয়ান চেক করতে পারবেন।
জমির খতিয়ান চেক করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্যঃ-
- বিভাগ এর নাম জেলার নাম জেলার নাম মৌজার নাম ইত্যাদি জানতে হবে।
- জমির মালিকের নাম এবং জমির দাগের নাম্বার জানতে হবে।
- সক্রিয় একটি মোবাইল নাম্বার দিতে হবে ।
- এনআইডি কার্ড এর নাম্বার ও জন্মতারিখ জানতে হবে ।
- টাকা পেমেন্ট করার জন্য বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় এবং ekpay থাকতে হবে।
জমির খতিয়ান চেক
অনলাইনে জমির খতিয়ান চেক একদম সহজ একটি বিষয়। নিচে আমি ধারাবাহিকভাবে আপনাকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি;
১ নং ধাপঃ
জমির খতিয়ান চেক করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল eporcha.gov.bd এই ওয়েবসাইটে আপনাকে ঢুকতে হবে
২ নং ধাপঃ
এই ওয়েবসাইটে ঢোকার পর মেনুবারে পাঁচটি ক্যাটাগরি থাকবে প্রথমটি নির্দেশিকা, দ্বিতীয় নাম্বারটি সার্ভে খতিয়ান, তৃতীয় নাম্বারটি নামজারি খতিয়ান, চতুর্থ নাম্বার মৌজা ম্যাপ এবং পঞ্চম নাম্বার ক্যাটাগরি টি থাকবে আবেদনের অবস্থা। আপনি সার্ভে খতিয়ান এর ওপর ক্লিক করুন।
৩ নং ধাপঃ
খতিয়ানের ধরণ সিলেক্ট করা হয়ে গেলে আপনার মৌজার নাম অনুসন্ধান করতে হবে। আপনার এলাকার খতিয়ান অনুযায়ী মৌজার লোকেশন সিলেক্ট করতে হবে। যদি আপনি মৌজার লোকেশন খুঁজে না পান, তাহলে সাধারনত আর এস খতিয়ান দিলে বেশিরভাগ মৌজা লোকেশন খুঁজে বের করা যায়। আর এস খতিয়ানের মধ্যে যদি আপনার লোকেশন খুঁজে না পান! সেক্ষেত্রে আপনি অন্য খতিয়ান সিলেক্ট করে দেখতে পারেন।
৪ নং ধাপঃ
মৌজা সিলেক্ট করার পর খতিয়ানের তালিকা চলে আসবে সেই তালিকার ধরে আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন আপনার খতিয়ান নাম্বার যদি ওই তালিকার মধ্যে আপনার খতিয়ান নাম্বার না থাকে সেক্ষেত্রে আপনি খতিয়ান তালিকা মধ্যে আপনার মালিকানা নামটি দিয়ে অথবা খতিয়ান নম্বর দিয়ে সার্চ করলে আপনার খতিয়ানের তালিকা চলে আসবে।
খতিয়ানের তালিকা খুঁজে পাওয়ার পর সেই তালিকার ওপর ডাবল ক্লিক করবেন। সিঙ্গেল ক্লিক করলে তালিকা ওপেন নাও হতে পারে। সেজন্য আপনাকে ডাবল ক্লিক করতে হবে ডাবল ক্লিক করলে নিচের ছবির মত পেজটি চলে আসবে। সেই পেইজে খতিয়ান এবং দাগ নং দেওয়া থাকবে।
দাগ নাম্বার এর পাশাপাশি আপনি বিস্তারিত আরো জানতে চাইলে বিস্তারিত লেখার ওপর চাপ দিন তাহলে বিস্তারিত সকল তথ্য চলে আসবে নিচে দেওয়া পেইজের মত করে।
খতিয়ানের জন্য যদি আবেদন করতে চান সে ক্ষেত্রে খতিয়ান আবেদন লেখার উপর চাপ দিলে আপনি জমির খতিয়ান এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
খতিয়ান আবেদনঃ-
খতিয়ানের আবেদন করার জন্য খতিয়ান আবেদন এর ওপর চাপ দিতে হবে এর উপর চাপ দিলে আবেদন করার জন্য অপর একটি পৃষ্ঠা ওপেন হবে। সেই পেজে আপনাকে আবেদনের জন্য নাম ঠিকানা এবং ইত্যাদি তথ্যসমূহ দিতে হবে।
এরপরে খতিয়ান আবেদন ফরম চলে আসবে। যেখানে আপনার খতিয়ান নাম্বার সহ মৌজা এবং উপজেলার নাম লেখা থাকবে। এখানে আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার এবং জন্ম তারিখ বসাতে হবে। পাশাপাশি সক্রিয় একটি নাম্বার দিতে হবে। এবং সর্বশেষ যাচাই করুন এর উপর চাপ দিতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উল্লেখিত লাল তারকা রচিত চিহ্নগুলো পূরণ না করলে ফরমটি পূরণ করা যাবেনা।
যাচাই করার পর নিচে আপনাকে আপনার ইংরেজী নাম দিতে হবে। এবং একটি ই-মেইল এড্রেস দিতে হবে। ইমেইল এড্রেস দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। না দিলেও চলবে। ঠিকানা দিতে হবে অরিজিনাল ঠিকানা। এরপরে আবেদনের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। যদি অনলাইন কপি চান সে ক্ষেত্রে অনলাইন কপি উপর চাপ দিবেন।
আর যদি সার্টিফাইড কপি চান সে ক্ষেত্রে সার্টিফাইড কপি উপর চাপ দিবেন। অনলাইন কপি উপর চাপ দিলে ডান পাশে সেবাপ্রদানের তথ্যাদি চলে আসবে এবং খতিয়ান ফি কত টাকা সেটাও দেওয়া থাকবে।
সার্টিফাইড কপি:-
সার্টিফাইড কপি আবেদন করতে চাইলে সেবা প্রদানের পদ্ধতি এবং সেবা প্রদানের স্থান নির্বাচন করতে হবে। আপনি যদি দেশের ভিতর থেকে থাকেন তাহলে দেশের অভ্যন্তরে সিলেক্ট করবেন। আর যদি দেশের বাইরে থাকেন সেক্ষেত্রে দেশের বাইরে সিলেক্ট করবেন। এরপর সর্বশেষ আপনাকে ফি প্রদান করা হবে করতে হবে।
এবং ডান পাশে সেবা প্রদানের তথ্যাদি দেওয়া থাকবে। যেখানে ফি প্রদানের সময়সীমা দেওয়া থাকবে এবং প্রদানের সম্ভাব্য একটি তারিখ দেওয়া থাকবে। পাশাপাশি খতিয়ান ফি, পোস্ট ফ্রি এবং মোট কত টাকা ফি দিতে হবে সেটিও লেখা থাকবে।
ফি পরিশোধ করুনঃ-
সর্বশেষে আপনাকে ফি পরিশোধের মাধ্যমে সিলেক্ট করতে হবে। ফি পরিশোধ করতে পারবেন বিকাশ, নগদ, রকেট উপায় এবং ekpay এর মাধ্যমে। এবং সবার শেষে যোগফফল প্রদান করুন। আর পরবর্তী ধাপ (ফি পরিশোধ) এর ওপর চাপ দিন। তাহলে আপনার কাঙ্খিত পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট নাম্বারে একটি ওটিপি চলে যাবে সেই ওটিপি বসাতে হবে এবং সাথে সাথেই টাকার পরিমান চলে আসবে আপনাকে শুধু বিকাশ নগর অথবা রকেটের পাসওয়ার্ড বসিয়ে পেমেন্টের উপর দিতে হবে।
এরপর সর্বশেষে আপনার জমির খতিয়ান অনলাইন কপি বের হয়ে যাবে। চাইলে সেটি কম্পিউটার থেকে স্ক্যান করে বের করে নিয়ে দেখতে পারেন। অথবা পিডিএফ হিসেবে মোবাইলে ডাউনলোড করে বিস্তারিত সবকিছু দেখতে পারবেন ও বুঝতে পারবেন।
জমির খাজনা চেক
জমির খাজনা চেক করার অফিশিয়াল ভাবে কোন পদ্ধতি বা উপায় নেই। আপনি যখন ভূমি উন্নয়ন কর দিবেন ঠিক সেইসময় আপনাকে চেক করে নিতে হবে জমির খাজনা। সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমে জমির খাজনা পরিশোধ করবেন। তারপর আপনাকে খাজনা পরিষদের রশিদ দেওয়া হবে। যে রশিদের মধ্যে সমস্ত কিছু ইনফরমেশন পেয়ে যাবেন। আর এই জন্য আপনাকে ভিজিট করতে হবে ভূমি উন্নয়নের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইটের লিঙ্ক হচ্ছে ldtax.gov.bd
জমির খাজনা কি?
বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সরকারকে আপনার জমির রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা দিতে হয়। আর নাগরিক হিসেবে আপনি এদেশের জমির মালিকানা পাবেন। সেই ভোগ করার বিনিময়ে সরকারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করতে হয় যাকে কর বা Tax বলা হয়।
জমির খাজনা কেন দেবো?
বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক মানুষেরই উচিত সঠিকভাবে দেশের শহর বা শুল্ক সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে সঠিকভাবে আদায় করা। জমির খাজনা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যই হলো জমির মালিকানার পাশাপাশি জমির নিরাপত্তা ও সরকারের এবং দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে টেক্স বা শুল্ক আদায় করা আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের প্রথম দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর ঠিক এই কারণেই জমির খাজনা দেওয়াটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
FAQ
মোবাইল দিয়ে খতিয়ান চেক করা যায়?
হ্যাঁ মোবাইল দিয়ে অনলাইনে খতিয়ান চেক করা যায়।
খতিয়ান চেক করার ওয়েবসাইট এর নাম কি?
জমির খতিয়ান চেক করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল eporcha.gov.bd
জমির রেকর্ড কী?
সরকারি খাতায় জমির নামজারি করার জন্য গভারমেন্ট রেভিনিউ রেকর্ড করা হয়। তার মধ্যে কে জমির মালিক সেটি উল্লেখ করা থাকে। আর এই প্রক্রিয়াকেই জমির রেকর্ড বলা হয়।
জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয়?
জমির রেকর্ড সাধারণত ৩০ বছর পরপর রেকর্ড করা হয়। আর এই রেকর্ড আপনি অনলাইনে এবং অফলাইনে দুইভাবে করতে পারবেন।
Rs রেকর্ড কত সালে হয়?
১৯৫৬ থেকে ১৯৬২ সাল।
শেষ কথাঃ>
জমির খতিয়ান চেক, সম্পর্কে আশা করি সবাই সম্মুখ একটি ধারণা পেয়েছেন। এর পাশাপাশি জমির রেকর্ড যাচাই এবং জমির খাজনা চেক সম্পর্কেও আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। এই সকল তথ্য নেওয়া হয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে।
এরপরেও যদি আপনাদের কোন রকম বুঝতে অসুবিধা হয় সেক্ষেত্রে আপনারা উপরে দেওয়া ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন। সেই ভিডিওটিতে বিস্তারিতভাবে সবকিছু বলে দেওয়া আছে। আর আপনি যদি এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ সবাইকে।