ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম, আসসালামুআলাইকুম, প্রিয় পাঠক-পাঠিকা। আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে ই-পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম এবং ই পাসপোর্ট ফি কত? সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনারা অনেকেই জানেন না এই পাসপোর্ট কি করে চেক করতে হয়।
তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে এটুজেড জানিয়ে দেবো। আশা করছি আপনারা অন্য কোন ব্লগ পোষ্ট পড়ার দরকার পড়বেনা। যদি আমার আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন। তো চলুন বেশি কথা না বাড়িয়ে আজকের মূল আলোচনায় চলে যাওয়া যাক। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম।
ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম |
ই-পাসপোর্ট কি?
ই-পাসপোর্ট হল ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট। অর্থাৎ এর মধ্যে একটি বায়োমেট্রিক এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর ঠিক থাকে। আর ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপে এর মাধ্যমেই বায়োমেট্রিক তথ্য ও পাসপোর্টধারীর পরিচয় প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়। মাইক্রোপ্রসেসর এবং এন্টেনাসহ স্মার্টকার্ড প্রযুক্তির মাধ্যমে মূলত একটি ব্যবহার করা হয়। পাসপোর্টের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি এই চিপে সংরক্ষণ করা থাকে।
ই পাসপোর্ট এর মধ্যে সাধারণত পাসপোর্টধারীর ছবি ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং চোখের রেটিনা ও আইরিশের ইলেকট্রনিক বর্ডার কন্ট্রোল করার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয় এবং তা ই পাসপোর্ট নামে পরিচিত সবার কাছে।
ই পাসপোর্ট এর মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি কোন দেশের নাগরিক এবং তার সমস্ত বায়োডাটা সেই ই-পাসপোর্ট এর মধ্যে বিদ্যমান থাকে। এতে করে খুব সহজেই শনাক্ত করা যায় পাসপোর্টধারী কে।
আরও পড়ুন:-
ই-পাসপোর্টের সুবিধা কী?
ই-পাসপোর্ট সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই যেকোন দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। কারণ এর ইলেকট্রনিক সিস্টেম থাকার কারণে আপনি অনেক সহজেই ইমিগ্রেশন করতে পারবেন এবং খুব তাড়াতাড়ি ভ্রমণ এর স্বাদ নিতে পারবেন।
পাসপোর্ট চেক করতে যা যা লাগবেঃ-
- একটি মোবাইল অথবা কম্পিউটার
- ইন্টারনেট সংযোগ
- Date Of Birth বা জন্মতারিখ
- (OID) অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি
- অ্যাপ্লিকেশন আইডি
একটি মোবাইল অথবা কম্পিউটার:-
ই পাসপোর্ট চেক করার জন্য অবশ্যই আপনার একটি মোবাইল অথবা কম্পিউটার থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া আপনি পাসপোর্ট চেক করতে পারবেন না।
ইন্টারনেট সংযোগ:-
শুধু মোবাইল এবং কম্পিউটার থাকলে হবে না, তার সাথে অবশ্যই আপনার ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে কোনভাবেই আপনি ই-পাসপোর্ট চেক করতে পারবেন না। তাই অবশ্যই মোবাইলে অথবা কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে নিবেন।
Date Of Birth বা জন্ম তারিখঃ-
ই পাসপোর্ট চেক করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আপনার পাসপোর্ট আবেদন করার সময় যে জন্ম তারিখ দিয়েছিলেন, সেই জন্ম তারিখ টি দিতে হবে। অন্যথায় আপনার ই পাসপোর্ট চেক করতে পারবেন না। তাই অবশ্যই ই পাসপোর্ট চেক করার সময় জন্মতারিখ ভালভাবে দেখে শুনে তারপর চেক করবেন।
(OID) অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি:-
ই পাসপোর্ট আবেদন সময় একটি ইউনিক আইডি দেয়া থাকে সবার জন্য। যে আইডি কে বলা হয় অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি বা ODI. আর ই-পাসপোর্ট চেক করার জন্য আপনার ODI আইডিপি জানা লাগবে তা না হলে আপনি কোনভাবেই অনলাইনে কি পাসপোর্ট চেক করতে পারবেন না। সাধারণত OID আইডি নাম্বারটি যখন কি পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করা হয় তখনই দেওয়া হয়ে থাকে।
অ্যাপ্লিকেশন আইডি:-
অ্যাপ্লিকেশন আইডি তে আপনি আপনার পাসপোর্ট এর শেষের দিকে সামারি তে খুঁজে দেখলে পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে আইডি কোড টি নিয়ে ই-পাসপোর্ট চেকিং এর সময় বসাতে হবে।
ই-পাসপোর্ট চেক করার নিয়মঃ-
- ই-পাসপোর্ট অ্যাপ্লিকেশনের জন্য অবশ্যই আপনাকে সবার প্রথমে https://www.epassport.gov.bd/authorization/application-status ই পাসপোর্ট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
- এরপর আপনার সামনে চেক অ্যাপ্লিকেশন স্ট্যাটাস একটি মেনু চলে আসবে। সেই মেনুতে আপনাকে অ্যাপ্লিকেশন আইডি অনলাইন অথবা রেজিস্ট্রেশন আইডি এবং জন্ম তারিখ বা ডেট অফ বার্থ বসাতে হবে।
- জন্মতারিখ বসানোর পর তার নিচে আপনার সামনে একটি ক্যাপচা চলে আসবে। সে ক্যাপচার মধ্যে আই এম এ হিউম্যান লেখা থাকবে। আপনাকে এর উপর টিক চিহ্ন দিতে হবে। তারপর চেক অপশন এর ওপর ক্লিক করতে হবে।
- এবং সর্বশেষ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আপনার পাসপোর্ট এর বর্তমান অবস্থা দেখতে পারবেন।
আরও পড়ুন:-
ই পাসপোর্ট ফি কত?
ই পাসপোর্ট ফি সাধারণত নেওয়া হয় ই পাসপোর্ট আবেদনের সময়। আর এই ই-পাসপোর্ট ফি আপনি অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারবেন। পাশাপাশি ব্যাংকেও পেমেন্ট করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের অনেকগুলো ব্যাংকে আপনি পেমেন্ট করার সুযোগ পাবেন। তারমধ্যে এশিয়া ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ইত্যাদি ব্যাংকে ফি জমা দেওয়া যাবে।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট ফিঃ-
৫ বৎসর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট:-
- ২১ দিনের নিয়মিত ডেলিভারি ৪০২৫ টাকা।
- ১০ দিনের এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৬৩২৫ টাকা।
- দুই দিনের সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৮৬২৫ টাকা।
১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট সহ ৪৮ পৃষ্ঠা:-
- ২১ দিনের নিয়মিত ডেলিভারি ৫৭৫০ টাকা।
- ১০ দিনের এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৮০৫০ টাকা।
- দুই দিনের সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১০,৩৫০ টাকা।
৫ বছর মেয়াদ সহ ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট:-
- ২১ দিনের নিয়মিত ডেলিভারি ৬৩২৫ টাকা।
- ১০ দিনের এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৮৬২৫ টাকা।
- দুই দিনের সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১২,০৭৫ টাকা।
১০ বছর মেয়াদ সহ ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট:-
- ২১ দিনের নিয়মিত ডেলিভারি ৮০৫০ টাকা।
- ১০ দিনের এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১০,৩৫০ টাকা।
- দুই দিনের সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১৩,৮০০ টাকা।
ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের জন্য নির্দেশাবলী:
- ই-পাসপোর্ট অবশ্যই অনলাইনে আবেদন করা যাবে।
- ই পাসপোর্ট করতে কোন রকম ছবি সংযোজন করা লাগেনা।
- ই পাসপোর্ট আবেদনের জন্য কাগজপত্র সত্যায়িত করার দরকার নেই।
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড (NID) অথবা জন্ম সনদ দেখে দেখে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
- যদি বয়স ১৮ বছরের কম হয়ে থাকে এবং জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে, তাহলে অবশ্যই বাবা-মার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
- ১৮ বছরের নিচে বয়স হলে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যে জন্ম নিবন্ধন থাকবে সেটি ব্যবহার করতে হবে।
- ১৮ থেকে ২০ বছর বয়স হলে জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন উল্লেখ করতে হবে।
- আর ২০ বছরের উপরে বয়স হলে জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে আবেদন করতে হবে।
- স্টার চিহ্নিত ক্রমিক নম্বর গুলো অবশ্যই পুরন করতে হবে।
- ১৮ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে সকল আবেদনকারীর ই পাসপোর্ট এর মেয়াদ হবে পাঁচ বছর এবং ৪৮ পৃষ্ঠার।
- আপনি যদি কোন পদে অথবা প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল সনদ সমূহ যেমন ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার, ডাক্তার, শিক্ষক ইত্যাদি হয়ে থাকেন, তাহলে সেগুলো অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
- যদি আপনি কোন এনজিও অথবা জিও এবং অবসরপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন অথবা পেনশন পেয়ে থাকেন তাহলে সেগুলো অবশ্যই সংযোজন করতে হবে।
- বিয়ের সনদ অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের যে তালাকনামা রয়েছে তা দাখিল করতে হবে।
- শুধুমাত্র দেশের ক্ষেত্রে আবেদন যদি করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার জন্য যে ফি নির্ধারিত করা হয়েছে তার সাথে ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জ কেটে নেওয়া হবে।
- আবেদনের সময় অবশ্যই আপনার অরিজিনাল জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সরকারি আদেশ দাখিল করতে হবে।
- যখন পাসপোর্ট রি-ইস্যু করবেন তখন মূল পাসপোর্ট দেখাতে হবে।
- যদি পাসপোর্ট হারিয়ে যায় সে ক্ষেত্রে মূল জিডির কপি প্রদর্শন করতে হবে।
- পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে অথবা চুরি হয়ে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে এবং পুনরায় পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হবে। আর সাথে করে অবশ্যই জিডির ফটোকপি নিয়ে যেতে হবে।
{FAQ}
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে?
৫ বৎসর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট:-
- ২১ দিনের নিয়মিত ডেলিভারি ৪০২৫ টাকা।
- ১০ দিনের এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৬৩২৫ টাকা।
- দুই দিনের সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৮৬২৫ টাকা।
কিভাবে পাসপোর্ট চেক করবো?
ফোনে ডায়াল অপশনে চলে যান সেখানে গিয়ে টাইপ করুন; ১-৮৭৭-৪৮৭-২৭৭৮ নম্বরে কল দিন।
আমার পাসপোর্ট হয়েছে কি না তা জানতে চাই?
- ই-পাসপোর্ট অ্যাপ্লিকেশনের জন্য অবশ্যই আপনাকে সবার প্রথমে https://www.epassport.gov.bd/authorization/application-status ই পাসপোর্ট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
শেষ কথাঃ-
ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম, সম্পর্কে আশাকরি আপনারা ভালো ধারণা পেয়েছেন এবং আমি এখানে ই পাসপোর্ট ফি কত সে সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনাদের আর কোনো আরটিকেল পড়ার দরকার নেই। কারণ আমি পাসপোর্ট চেক করার একদম নতুন নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করে দিয়েছি, এর বাইরে আর কোন চেক করার নিয়ম নেই। তবে হ্যাঁ, সরাসরি আপনি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে চেক করতে পারেন।
তবে সেটা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে আপনার জন্য। এজন্য সহজে কিভাবে আপনি ঘরে বসেই ই পাসপোর্ট চেক করতে পারবেন সে সর্ম্পকে বিস্তারিত জানিয়ে দিলাম। আপনারা যদি একটু উপকৃত হয়ে থাকেন, আমার এই আর্টিকেল পড়ে! তাহলে অবশ্যই ছোট্ট করে একটি মন্তব্য করে দিবেন। আর যদি কোন রকম প্রশ্ন থেকে থাকে তা হলেও তা জানিয়ে দিবেন।
1 Comment
I don’t think the title of your article matches the content lol. Just kidding, mainly because I had some doubts after reading the article.