এক সময়, বাংলাদেশের ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোতে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটিকে (সিএসআর) তেমন গুরুত্ব দেওয়া হতো না। কিন্তু বর্তমানে, সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে সরকার ও দেশের ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো করপোরেট সুশাসনের আলোকে সিএসআরকে ব্যবসার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখে।
সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) আয়েশা আজিজ খান এই প্রসঙ্গে বলেন, “ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যত বড় হয়, ততই সেটি সামাজিকভাবে একটি বড় স্টেকহোল্ডার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।”
“সামিট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশকে দুইভাবে সেবা দেয়। একটি হলো – বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামোর উন্নয়ন, অপরটি হলো সামাজিক সেবামূলক কার্যক্রম। আমরা আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে তুলনামূলক কম মূল্যে দেশের মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ছাড়া, বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন অসম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, আমাদের সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা হলো এই দেশের মানুষের জন্য অল্প খরচে বিদ্যুৎ অবকাঠামো তৈরি করা। তাই আমাদের এই ব্যবসা অবশ্যই একটি সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ ব্যবসা। আমরা এমন একটি প্রতিষ্ঠান হতে চাই, যারা তাঁদের শেয়ারহোল্ডার ও স্টেকহোল্ডার –উভয়ের কাছেই সমানভাবে দায়বদ্ধ থাকবে।”
সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বিশ্বাস করেন, তিনি যেখানে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, সেই এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো তাঁর কর্তব্য, “সারা দুনিয়ায় আমরা যদি সমতা আনতে চাই তাহলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সেই কারণে আমরা আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকার সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোতে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি।”
সামিট যেসব জায়গায় কাজ করে সেখানে নতুন বিদ্যালয় তৈরি করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে। যেমন, সামিট গাজীপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ‘৩৮ নং কালিয়াকৈর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য জমি ক্রয় ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ভবন নির্মাণ করেছে। বিদ্যালয়টিতে এখন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
এ ছাড়া সিএসআর হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিজে কাজ করে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সামিট দীর্ঘ সময় ধরে সহায়তা করে আসছে।
আলোর পাঠশালা
২০০৯ সাল থেকে সামিট গ্রুপ ও আঞ্জুমান-আজিজ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের আর্থিক সহযোগিতায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোট সাতটি স্কুল পরিচালনা করছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম, ভোলা, নওগাঁ, টেকনাফ ও বান্দরবানে ১টি করে এবং রাজশাহীতে ২টি স্কুলে বছরে মোট ১ হাজার ৩৫০ জন শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে পড়াশোনা করছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী আলোর পাঠশালা থেকে অন্তত পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেছে। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে।
সীড-সামিট কমিউনিটি থেরাপি স্কুল
১৩ বছরের বেশি সময় ধরে কামরাঙ্গীরচরে সিড ট্রাস্ট পরিচালিত “সীড-সামিট কমিউনিটি থেরাপি স্কুলে” সুবিধাবঞ্চিত নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) শিশুদের শিক্ষাদানে এককভাবে অর্থসহায়তা দিচ্ছে সামিট। বিশেষায়িত এই স্কুলে সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারার পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মমূখী ও সৃজনশীল কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেন তাঁরা আত্ন-নির্ভরশীল হতে পারে। ইতিমধ্যে সীড-সামিট কমিউনিটি থেরাপি স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার শেষ করে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে, নিজে রোজগার করছেন।
এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি সামিট গ্রুপ ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রয়াস ইন্সিটিউট অব স্পেশাল এডুকেশনের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আর্থিক অনুদান এবং অন্যান্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা থেকে ২০২০ সালে মুহাম্মদ আজিজ খান ও তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আজিজ খান, নিজ খরচে যৌথভাবে গড়ে তুলেছেন আঞ্জুমান-আজিজ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপ ও আঞ্জুমান-আজিজ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজুড়ে চলমান বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। যেমন,ঢাকার বস্তি এলাকার ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের পাঠাদানের জন্য ইউনিসেফের উদ্যোগে পরিচালিত স্কুল, সেখানে ৩,০০০ হাজারের বেশি সুবিধাবঞ্চিত শিশু পড়াশোনা করছে।
একজন সফল ও অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী হিসেবে মুহাম্মদ আজিজ খান মনে করেন, যেকোনো সভ্যতার উন্নয়নে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা হচ্ছে সেই সমতা নিশ্চিত করার চাবিকাঠি। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতার’ একটি অংশকে সব সময় অনুসরণ করেন। সেটি হলো–‘তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান; গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়’।
আয়েশা আজিজ খান আরও বলেন, সামিট গ্রুপ সবসময়ই সামাজিক দায়বদ্ধতা পূরণে আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে। একইসাথে দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করাটাই তাদের মূল লক্ষ্য।