কোরবানির ঈদ কত তারিখে 2023, আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক-পাঠিকা। আশা করি সবাই খুবই ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে ২০২৩ সালে কোরবানির ঈদ কত তারিখে? সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনারা অনেকেই গুগলে সার্চ করতেছেন কোরবানির ঈদ কত তারিখ 2023, আবার অনেকেই জানেন না কোরবানির ঈদ কত তারিখে হবে? তাই আজকের এই আর্টিকেলটির পড়লে, আপনারা কোরবানির ঈদ ২০২৩ সালে কত তারিখে? সে সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন।
ঈদুল আযহা
হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মুসলমানরা হযরত ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম কে অনুসরণ করেই এই উৎসবটি পালন করে থাকে। একদিন হযরত ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম কে স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহতালা নির্দেশ দিলেন তার নিজ পুত্রকে কোরবানি করার জন্য এবং আল্লাহতালার সেই নির্দেশ অনুযায়ী যখন তিনি তার পুত্রকে কোরবানি করার উদ্দেশ্যে ছুরি চালাবেন! ঠিক তখনই আল্লাহর নির্দেশে পুত্রের জায়গায় একটি দুম্বা কুরবানী হয়ে যায়। এবং তখন থেকেই এই প্রচলন মুসলিমদের মাঝে অনুসরণীয় হয়ে আছে।
খুব সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। আপনারা চাইলে হযরত ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম এবং ঈদুল আযহার ইতিহাস পড়ে নিতে পারেন উইকিপিডিয়া থেকে।
কোরবানির ঈদ কত তারিখে 2023
২০২৩ সালে কত তারিখে ঈদুল আযহা এবং ঈদুল আযহা কত তারিখে ২০২৩ এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এই মাসে অর্থাৎ জুন ২০২৩ এর ২৮ অথবা ২৯ তারিখের মধ্যেই ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এটা নির্ভর করবে শুধুমাত্র চাঁদ দেখার উপর।
ঈদুল আজহা ২০২৩ কত তারিখে সৌদি আরব
সৌদি আরবে ২০২৩ সালে কত তারিখে ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে তা নির্ভর করবে চাঁদ দেখার উপর। জিলহজ মাসের ৯ তারিখে মূলত ঈদুল আযহা পালন করে সৌদি আরবে। মূলত ঈদুল ফিতরের প্রায় ৭০ দিন পরে ঈদুল আযহা সৌদি আরবের ইসলামিক ফাউন্ডেশন পালন করে থাকে।
অর্থাৎ এর থেকে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশে যদি ২৮ জুন তারিখ ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হয়। তাহলে সৌদি আরবে ২৭ জুন তারিখ কোরবানি ঈদ বা ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে। আর যদি বাংলাদেশে ২৯ জুন তারিখ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়, তাহলে সৌদি আরবে 28 জুন তারিখ ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে একদিন এর কম বেশি থাকার কারণে এরকম তারতম্য ঘটে।
কোরবানির পশু জবাই করার দোয়াঃ
কোরবানি করার সময় দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি বিষয় অনেকেই এই বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কিন্তু এটি কোরবানির পশুর কষ্ট লাঘব করার জন্য দোয়াগুলো পড়া অত্যন্ত জরুরী এবং পালনীয়। একটি বিষয় তাই আমরা কোরবানির পশু জবাই করার সময় নিচের এই দোয়াটি পড়বো।
দোয়াটি হলো-
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ – إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ – بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
বাংলা উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
ঈদুল আজহা ২০২৩ কত তারিখে
এবছর আরবি মাসের জিলহজ মাসের ৯-১০ তারিখ এর মধ্যে ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হবে। আর বাংলাদেশে ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জুন মাসের ২৮-২৯ তারিখের মধ্যে ঈদুল আযহা উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তবে পুরোপুরি নির্ভর করবে চাঁদ দেখার উপর।
২০২৩ কোরবানির ঈদ কত তারিখে
বাংলাদেশে ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জুন মাসের ২৮-২৯ তারিখের মধ্যে ঈদুল আযহা উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তবে পুরোপুরি নির্ভর করবে চাঁদ দেখার উপর।
আমরা ঈদুল আযহা কেন পালন করি?
ঈদুল আযহা অর্থাৎ ত্যাগের উৎসব। আমরা কেন পালন করি এটা অনেকেই মনের মধ্যে প্রশ্ন তোলেন। আমরা মূলত মুসলিমরা হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে অনুসরণ করে এই উৎসবটি পালন করে থাকি। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার নিজের পুত্রকে কুরবানী করার জন্য (স্বপ্নে) এবং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী তিনি সেই কাজ করার জন্য ছেলের অনুমতি চেয়েছিল তখন ছেলে অনুমতি দিয়েছিল। এরপর যখন তিনি তার ছেলেকে কোরবানি করার উদ্দেশ্যে ছুড়ি গলায় চালায়! তখনই আল্লাহতালার নির্দেশে ছেলের পরিবর্তে কুরবানী হয়ে যায়।
আল্লাহতালা মূলত হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে পরীক্ষার নিচ্ছিলেন এবং হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহ তালার সেই পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তাই তখন থেকেই এই ত্যাগ স্বীকার করার ফলে আল্লাহ তাআলার নিকট হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম অনেক প্রিয় বান্দা হয়ে যান। এবং তারই স্মরণে তখন থেকেই ঈদুল আযহা পালন করা হয়।
কোরবানি আমাদের হিংসা-বিদ্বেষ অহংকার ইত্যাদি কে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়। প্রত্যেক মুসলমান কোরবানির মাধ্যমে অহংকার হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি সবকিছুকে আল্লাহর জন্য ত্যাগ করেন। আর এই ফজিলত পাওয়ার জন্যই আমরা মুসলিমরা ঈদুল আযহা পালন করে থাকি।
ঈদ উল আযহা সম্পর্কে হাদিস
صح عن ابن عمر- رضى الله عنهما- أنه كان يغتسل يوم الفطر قبل أن يغدوا إلى المصلى. رواه الإمام مالك في أول كتاب العيدين وقال سعيد بن المسيب سنة الفطر ثلاث: المشي إلى المصلى، والأكل قبل الخروج، والاغتسال. [ إرواء الغليل للألباني]
ইবনে উমর রা. থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত, তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।[5] সায়ীদ ইবনে মুসাইয়াব রহ. বলেন: ঈদুল ফিতরের সুন্নত তিনটি: ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া, ঈদগাহের দিকে রওয়ানার পূর্বে কিছু খাওয়া, গোসল করা। এমনি ভাবে সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব।[6]
عن بريدة- رضى الله عنه- قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم لا يخرج يوم الفطر حتى يأكل، ولا يأكل يوم الأضحى حتى يرجع، فيأكل من أضحيته . [رواه أحمد، وصححه الألباني في صحيح ابن ماجه]
বুরাই-দা রা. থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানির মাংস খেতেন।[7]
عن علي- رضى الله عنه- قال: من السنة أن تخرج إلى العيد ماشيا. رواه الترمذي وحسنه وقال: والعمل على هذا عند أكثر أهل العلم: يستحبون أن يخرج الرجل إلى العيد ماشيا، وأن لا يركب إلا بعذر. [حسنه الألباني في صحيح سنن الترمذي]
আলী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: সুন্নত হল ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। ইমাম তিরমিযি হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন হাদিসটি হাসান। তিনি আরও বলেন: অধিকাংশ আলেম এ অনুযায়ী আমল করেন। এবং তাদের মত হল পুরুষ ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাবে, এটা মোস্তাহাব। আর গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া যানবাহনে আরোহণ করবে না।[8]
শেষ কথাঃ-
কোরবানির ঈদ কত তারিখে 2023, আশা করছি আপনাদের কোরবানির ঈদ কত তারিখ বাংলাদেশে সে সম্পর্কে একটি ধারনা এসেছে। আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী সবকিছু তুলে ধরেছি। পাশাপাশি আপনাদেরকে কোরবানির পশু জবাই করা এবং কোরবানির কেন আমল করতে হবে আমরা কেন করি আমল এবং কোরবানির ঈদ সম্পর্কে কিছু হাদিস সমূহ উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি।
আপনার এই আর্টিকেলটি পড়ার পর যদি এতোটুকু পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে আপনারা আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ সবাইকে।
আপনার জন্য আরওঃ-